@abdullahmojumder

Abdullah Mojumder

Ask @abdullahmojumder

“ধর্ম মানুষদের জন্য আফিমের মত” কথাটা অনেক শুনেছি। এর অর্থটা কী?

কথাটার অর্থ হল ধনী, বুর্জোয়া, ক্ষমতাসীন ও পুঁজিবাদীরা দরিদ্র এবং প্রলেতারিয়েত সম্প্রদায়ের কাছে তাদের পার্থিব দুর্দশা, দারিদ্র্য, কষ্ট ও পুঁজির অভাবের বিনিময়ে সান্ত্বনা হিসেবে ধর্মকে উপস্থাপন করে। এটা মার্কসের শ্রেণি সংগ্রাম তত্ত্বের আলোকে প্রদত্ত বক্তব্য। মার্কসই সর্বপ্রথম এই বক্তব্য দিয়েছে।
কথাটা কখনো সঠিক অর্থে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সেটা দ্বীনকে সঠিক হিসেবে ধরে নেওয়া ব্যতিরেকেই। অনেক সময় ভ্রষ্ট লোকেরা ধর্মকে মানুষদের আফিম হিসেবে আসলেই ব্যবহার করে। তারা হত্যা করে, যুলুম করে এবং চুরি করে। তখন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা জনসম্মুখে বেরিয়ে এসে মানুষকে ধর্ম দিয়ে শান্ত করে এবং শাসকদের কাজকে বৈধতা প্রদান করে। এটা প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টানদের মাঝে দেখা যায়। আপনি যদি লুথার-কেলভিনদের লেখা পড়েন তাহলে এমন দৃষ্টান্ত পাবেন। মুসলিমদের মাঝেও এমন কিছু দৃষ্টান্ত অজানা নয়।
আর দ্বীন যে মানুষকে দুনিয়ার বদলে আখিরাতের সান্ত্বনা প্রদান করে, এটা দ্বীনের অন্যতম একটা সেরা বৈশিষ্ট্য। জীবনের অনেক বিপদ-আপদ এবং দুঃখ-দুর্দশা আছে যার সমাধান কেবল ধৈর্যধারণের মাধ্যমেই হতে পারে। ধৈর্য ধরলে মানসিক তৃপ্তি ও তুষ্টি আসে এবং জীবনধারণ করা সহজ হয়। এটা ব্যক্তির মানসিক সুস্থতার জন্যও অপরিহার্য।
বাকি রইল মার্ক্সের বক্তব্যের সমস্যা। মার্ক্সের বক্তব্য অনুযায়ী ধর্ম মূলত সৃষ্টিই করা হয়েছে বুর্জোয়া শ্রেণিকে টিকিয়ে রাখার জন্য। এটা যুক্তিহীন দুর্বল কথা। একে তো দ্বীনের অস্তিত্বের দলীলসমূহ থেকে তা বোঝা যায়। অধিকন্তু ইতিহাসে যত রাজনৈতিক জাগরণ আমরা দেখতে পাই তার অধিকাংশ মূলত ধর্মীয় চেতনা থেকেই হয়েছিল। আর এটা মার্ক্সের দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের সাথে সাংঘর্ষিক। বস্তুত ইতিহাসের বৃহৎ পরিবর্তনসমূহ সংঘটিত হয়েছে নবী এবং বড় বড় তাগুতদের মাধ্যমে। যেমন: মুসা, সুলাইমান, মুহাম্মাদ আলাইহিমুস সালাতু ওয়াস-সালাম। তদ্রূপ যুল-ক্বারনাইন কিংবা মুসলিম খলীফাবৃন্দ। আবার তাগুতদের মাঝে আছে নমরূয, হালাকু, হিটলার প্রমুখ। সুতরাং সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন রাখার বক্তব্য দুর্বল।
তাছাড়া সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস তথা বুর্জোয়া-প্রলেতারিয়েত দ্বন্দ্বের বহু আগ থেকেই দ্বীনের অস্তিত্ব বিদ্যমান। প্রাচীনতম সমাজেও দ্বীন-ধর্মের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। প্লুতার্কের বিখ্যাত উক্তি না বললেই নয়, “এমন বহু নগরী আছে যেখানে প্রাসাদ নেই, বিনোদনকেন্দ্র নেই কিংবা খাদ্য সঞ্চয়ের স্থান নেই। কিন্তু এমন কোনো নগরী নেই যেখানে উপাসনালয় নেই।”
সামাজিক শ্রেণি বৈষম্য এবং বুর্জোয়া শ্রেণির উত্থান ষোড়শ শতাব্দীর আগে হয়নি। প্রাচীন যুগে (গ্রীক-ভারতীয়-মিশরীয়) যে সকল স্তর ছিল সেগুলো হয় বংশীয় নতুবা সামরিক বিন্যাস ছিল। এমনকি প্লেটোর ‘রিপাবলিক’-এ আমরা তাই দেখতে পাই।
[আ.ব.]

View more

সিনেমার প্রসার কি সভ্য হওয়ার আলামত?

হ্যাঁ, পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গীতে সভ্য হওয়ার যে সিঁড়ি সেটা অনুসারে সভ্য হওয়অর আলামত। মানুষ যেদিন থেকে পশ্চিমাদের অনুসরণ করতে শুরু করেছে সেদিন থেকে কিছু অর্জনের জন্য নিজের অনেক কিছু বিকিয়ে দিয়েছে। সে জীবনের অর্থকে বিসর্জন দিয়েছে। যে আধুনিক রাষ্ট্র সে গড়ে তুলেছে, সেটার ছায়ায় গিয়ে সে নিজের অনেক স্বাধীনতাকে ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। এই আধুনিক রাষ্ট্র তাকে পরিচালনা করে, তাকে ভেঙে দেয় এবং তাকে নিজের ইচ্ছামত বাধ্য করে। এটাই পরিণত হয়েছে তার উপাস্যে। প্রুধোঁ বলেন, “আপনি শোষিত হওয়ার অর্থ হল আপনি পুলিশি পর্যবেক্ষণে থাকবেন। আপনার উপর গোয়েন্দাগিরি চালানো হবে, আপনার গতিবিধিতে চোখ রাখা হবে এবং নিয়মকানুনের স্তূপের নিচে আপনার কবর রচিত হবে। আপনাকে পরিচালনা করা হবে, গিলে ফেলা হবে, মূল্যায়ন করা হবে, গণনা করা হবে, কর আরোপ করা হবে, শুধরে দেওয়া হবে, শাস্তি দেওয়া হবে। আর এ সব কিছু যে কোনো সময় যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে হবে।”
এই যে এত কিছু, এগুলোর অবশ্যই একটা বিনিময় আছে। সেটা হলো ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ। আধুনিক রাষ্ট্র কিংবা আধুনিকতার ভিত্তির সাথে সাংঘর্ষিক হয় না এমন সকল প্রবৃত্তি ও চিন্তার বিনোদনে ব্যক্তির পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান। বিনোদনের দিকে মানুষের ঝোঁক বিদ্যমান। এই ঝোঁক এবং ইচ্ছা মেটানোর জন্য কাল্পনিক শিল্পের প্রচার-প্রসার করার ধ্যান-ধারণার উৎপত্তি হয়েছে। এতে করে আকলের পিপাসা মিটবে। শিল্প-সাহিত্যের সেক্টর থেকেই আদর্শ (সেলিব্রেটি) তৈরির চিন্তা এসেছে যাতে আধুনিক মানুষের পিপাসার্ত হৃদয় সে সকল সেলিব্রেটিপূজার মাধ্যমে নিজেদের খায়েশ মেটায়।
সিনেমার ধ্যান-ধারণা এখান থেকেই এসেছে। আধুনিক পশ্চিমা চিন্তার স্বাভাবিক একটা ফল। এটা মানুষের মনের গভীর থেকে উৎসারিত আর্তনাদকে তুলে ধরে। তাই আমরা গত শতকের শিল্প-সাহিত্যে শূন্যবাদ ও হতাশার ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করি। শোপেনহাওয়ার থেকে শুরু করে সিওরান কিংবা কুন্ডেরা সবার লিখনীতে এর ছাপ স্পষ্ট। আর উপন্যাসের সাথে সিনেমার যে কী দৃঢ় সম্পর্ক তা অজানা নয়। অধিকন্তু সিনেমা একদিকে যেমন প্রবৃত্তিকে জাগ্রত করে, অন্যদিকে চিন্তা-চেতনাকে গভীরভাবে প্রভাবিত ও পরিচালিত করে।
তাই আমি বলব, হ্যাঁ। আমরা যদি পশ্চিমা চিন্তাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করি, তাহলে সিনেমা সভ্য হওয়ার আলামত। আমরা যদি পশ্চিমাদের এঁকে দেওয়া ইতিহাসের ‘উন্নতির ধারণা’ এবং পার্থিব স্বর্গ অর্জনের লক্ষ্যকে বেছে নিই, তাহলে সিনেমা উন্নতির পরিমাপক।
এমনকি এই নীতি অনুসারে নাইটক্লাব, পতিতালয়, সমকামী বিবাহ— সবই সভ্য হওয়ার আলামত।
সুতরাং কেমন সভ্য হতে চান সেটা আপনিই বেছে নেন। যদি চান ওহীর উপর প্রতিষ্ঠিত ইসলামের ‘সভ্য’ হওয়ার সংজ্ঞা, তাহলে না। আর যদি পশ্চিমাদের ‘সভ্য’ হওয়া সংজ্ঞা অনুসরণ করেন, তাহলে হ্যাঁ। সুতরাং মনে রাখবেন, লিবারেল এবং মডার্নিস্টরা যখন সিনেমার উৎকর্ষ সাধন করতে বলে, তখন তারা এমন কিছুই করতে বলে যেটা তাদের উপাস্য তাদেরকে করতে নির্দেশনা প্রদান করেছে।
[দুখাইন]

View more

খলীফা মামুনের শাসনামল কি আসলেই আলোকায়ন এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগ?

না। এটা মডার্নিস্টদের দাবি, যেটা জ্ঞানগত দিক থেকে দুর্বল এবং
ইসলামের ইতিহাসে মুক্তচিন্তা ও মুক্তচিন্তাকারীদের ব্যাপারে প্রাচ্যবিদদের দাঁড় করানো বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে বলা। জ্যোতির্বিজ্ঞান, রসায়ন ও চিকিৎসা-বিজ্ঞানে যা কিছু অনূদিত হয়েছে তার অধিকাংশ খলীফা মামুনের আগেই হয়ে গেছে। তার যুগে উপকারী যা কিছু অনুবাদ করা হয়েছে, সেগুলো তার পরবর্তী যুগে অনূদিত বিষয়গুলোর চাইতেও বেশি না। কিন্তু তার যুগে দর্শনের সে বইগুলো অনূদিত হয়েছিল, যেগুলো থেকে পূর্বে খুব বেশি অনুবাদ করা হয়নি। অধিকন্তু তার এবং তার পরবর্তী দুই শাসক ওয়াসেক ও মুতাসিমের আমলে জাহমী এবং মুতাযিলী সম্প্রদায় রাষ্ট্রযন্ত্রে প্রভাবক সাংস্কৃতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছিল। এ সময়টাতে আহলুস সুন্নাহকে এবং বিশেষ করে ইমাম আহমদকে “খালকুল কুরআন” বিষয়ে মিহনা তথা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আর এগুলো প্রাচ্যবিদদের কাছে মুক্তচিন্তা হিসেবে গণ্য, যেহেতু এই চিন্তার অনুসারীরা ধর্মীয় টেক্সটের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা অর্থোডক্স অবস্থানকে মেনে চলত না। তাই প্রাচ্যবিদদের কাছে মামুন খুবই প্রশংসিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়ে যায়।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে হবে, মামুন খারাপ মানুষ ছিল; তার নিন্দায় আলেমদের বক্তব্য স্পষ্ট ও প্রসিদ্ধ। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সে একজন ব্যর্থ শাসক। পুরো শাসনামল জুড়ে সে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহগুলো দমন করেছিল। যেমন: মিশরে তার নিযুক্ত প্রশাসকরা লুটপাট এবং অন্যায় কর আরোপ করায় সেখানকার খ্রিষ্টানরা যে বিদ্রোহ করেছিল, সেটা দমন করা। এছাড়াও পারস্যের যিন্দীকদের জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহের মোকাবেলা করা। যেমন: বাবেক আল-খুররামীর বিদ্রোহ। খলীফা মামুন এই বিদ্রোহ দমন করার আগেই মারা যায়। বাবেক তার যুগে একটা অঞ্চল নিয়ে প্রায় স্বাধীন ব্যক্তির মতই শাসক করতে থাকে। পরবর্তীতে খলীফা মুতাসিমই তাকে পরাজিত করতে সমর্থ হয়। পাশাপাশি খলীফা মামুন তার ভাইয়ের (আল-আমীন) বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং তাকে হত্যা করার কাজে সহায়তার প্রতিদানস্বরূপ খোরাসান অঞ্চলের শাসনভার ত্বাহেরীদের (একটা বংশ) দিয়ে দিয়েছিল।
সংক্ষেপে বলতে গেলে সে রাজনীতিতে একজন ব্যর্থ ও যুলুমবাজ শাসক আর চিন্তার দিক থেকেও পরাজিত ব্যক্তি। তাকে অতিরিক্ত সম্মান দেখানো মূলত মডার্নিস্টদের একটা বয়ান, যার জ্ঞানগত মূল্য নেই। একজন স্বৈরাচারী শাসক হওয়ার পাশাপাশি সে প্রতিপক্ষের রাজনীতিবিদ ও চিন্তাবিদদের মতকে দমন-পীড়ন করেছিল। তার এই অবস্থান আলোকায়নের (Enlightenment) মূল্যবোধের বিপরীত। কিন্তু মডার্নিস্টরা এগুলো দেখেও না দেখার ভান করবে। কারণ তারা এ সকল ব্যাপারগুলোতে পক্ষপাতদুষ্ট, চেরি-পিকিংই তাদের সম্বল, যেমনটা সবসময় আমরা বলে থাকি।
[আ. ব.]

View more

আসকালানী, নববী, বাকিল্লানী, ইবন আবী যাইদ কাইরোয়ানী, কাযী ইয়াযসহ এত এত প্রসিদ্ধ আলেম ভুল করবে আর শুধু ইবনে তাইমিয়্যা, ইবন আব্দুল ওয়াহ্‌হাবসহ সামান্য কিছু আলেম ঠিক হবে এটা কীভাবে সম্ভব?

আসকালানী (৮৫২ হি.) আর নববী (৬৭৬ হি.) পরবর্তী যুগের। সুতরাং ইবনে তাইমিয়ার (৭২৮ হি.) সাথে তাদেরকে এক কাতারে রাখাই যায়। বরং আকীদার ক্ষেত্রে তিনি তাদের চাইতে নিঃসন্দেহে অনেক স্তর উপরে। হ্যাঁ, দুইজন ভুল করতে পারেন আর তিনি ঠিক বলতে পারেন। স্বাভাবিক ব্যাপার।
আর ইবন আবী যাইদ কাইরোয়ানীর আকীদার সাথে ইবনে তাইমিয়া আর ইবন আব্দুল ওয়াহ্‌হাবের আকীদার পার্থক্য নেই, একই আকীদা। তিনি সুন্নী, বিদাতী না।
কাযী ইয়ায আর বাকিল্লানী দুইজনেরই ঠিক আছে আবার ভুলও আছে। তারা পরবর্তী আশআরীদের আকীদা থেকে মুক্ত। বরং তারা আমাদের অনেক কাছাকাছি। তবু কিছু বিষয়ে আমরা তাদের ভুল আছে বলি। স্বাভাবিক ব্যাপার। আলেম বলে স্বীকৃতি দেওয়ার মানে নির্ভুল বলে স্বীকৃতি দেওয়া না। কোনো এক শাস্ত্রে পাণ্ডিত্যের অর্থ সব শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য না।
ভাইজান, আমি চাইলে আপনার যুক্তিটা ঘুরিয়ে দিতে পারি।
যেই ইবন খুযাইমাকে ইমামুল আইম্মা বলা হয়, যার ইমামতের ব্যাপারে সবাই একমত; তিনি কি ভুল করতে পারেন? রাযীর কথামত তার ‘কিতাবুত-তাওহীদ’ কি ‘কিতাবুশ-শির্ক’ হতে পারে?
আর দারেমী? ইমাম আহমদের ছাত্ররা?
আচ্ছা ছাত্রদের কথা বাদ, ইমাম আহমদ নিজে? ইমাম বুখারী? ইমাম ত্বাবারী?!
আপনি হয়তো আবার অবাক হয়ে বলবেন, এরাও কি ভুল করতে পারে?! যে সালাফের মাধ্যমে আমরা দলীল দিই, ইবনে তাইমিয়্যা দলীল দেন, তিনিও কি ভুল করতে পারেন?!
অথচ ওহীর মাধ্যমে সালাফের প্রশংসা করা হয়েছে। সালাফের পরবর্তী যুগ থেকে হক কমতে থাকবে, এমনকি এক পর্যায়ে প্রথম যুগের মত সঠিক আকীদাও অপরিচিত হয়ে পড়বে।
প্রিয় ভাই, বিষয়টা একদম সহজ। সবাই ভুল করে, সবাই ঠিক করে। নির্দিষ্ট আকীদার প্রচারে রাজনীতির ভূমিকা অতীতে ছিল, আজও আছে। ওহী এবং সালাফের বুঝের সাথে যেটা মিলে, সেটাই বিবেচ্য। যে এর কাছে যাবে, সেই ওহীর কাছাকাছি যেতে পারবে। রাযী থেকে বাকিল্লানী কাছে যেতে পারবেন। ইবনে হাজর থেকে ইবন তাইমিয়্যা কাছে যেতে পারবেন। বিষয়টা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিন আর আল্লাহ আপনাকে যে পদ্ধতির দিকে হেদায়াত দিয়েছেন, সেটার মাধ্যমে হক অন্বেষণ করুন। সংখ্যাধিক্য বা প্রসিদ্ধিসহ যে সব বিষয়কে ওহী সামান্য গুরুত্বও দেয়নি, সেগুলোকে দিয়ে দলীল দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

View more

উমাইয়া বংশের শাসন কেমন ছিল? তারা কি আসলেই দ্বীন বিকৃতি করেছিল এবং হাশেমীদের গালমন্দ করেছিল? উমাইয়াদের ব্যাপারে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গী কী?

যে বংশের শাসনে বহু শাসক ছিল, তাদের ব্যাপারে আমভাবে কথা বলা ঠিক হবে না। এমনকি সেটা সাফাভী বা বুওয়াইহিদের ব্যাপারে হলেও।
তবে সংক্ষেপে বলতে গেলে উমাইয়া বংশের শাসনে আকীদাগত ও শরয়ী বেশ কিছু বিচ্যুতি দেখা দেয়। জাবরিয়া ও মুরজিয়া আকীদার উত্থান, তারপর জাহমী প্রভাব, এছাড়া সালাত দেরী করে পড়ার পাশাপাশি অনেক অপরাধে লিপ্ত হওয়া সবই তাদের সময়ে পাওয়া যায়।
আর (হাশেমী) আব্বাসীদের শাসন উমাইয়াদের চাইতেও খারাপ ছিল। তারা আরো বেশি নির্যাতন করেছিল এবং অপরাধে জড়িয়েছিল। উমাইয়াদের যুগের চাইতে তাদের যুগে এসে আবু ত্বালেবের বংশধরদের আরো বেশি নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল। কারণ তাদের মধ্যকার সংঘাতটা ছিল ক্ষমতা দখলের জন্য রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব; দ্বীনী দ্বন্দ্ব ছিল না।
আর দাইলামের পারসিক বুওয়াইহি বংশ যে আহলে বাইতের প্রতীক তুলে শ্লোগান ব্যবহার করে ক্ষমতায় আসীন হয়েছিল, তারাও অনেক অপরাধ করেছিল। তাদের সময়কালে দ্বীনে বহু বিদআতের অনুপ্রবেশ ঘটে। বিশেষত হুসাইনের স্মরণে বিভিন্ন শোকসভা ও মাতম করা তাদের মাধ্যমেই শুরু হয়। আর তারা তো সাফাভীদেরও আগে।
ইয়েমেনে যাইদীদের যে রাষ্ট্র ছিল, সেটাও তাকফীর করে মুসলিমদের বিপুল পরিমাণে রক্তপাত করছিল। পার্থক্য হলো এই যে, উমাইয়া ও আব্বাসীদের সাথে প্রতিপক্ষের দ্বন্দ্ব ছিল রাজনৈতিক। তাদের ক্ষমতার সামনে যে ব্যক্তি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাকে তারা শেষ করে দিয়েছে। কিন্তু যাইদী ইমামদের রাষ্ট্রে দ্বীনী ফতোয়া ব্যবহার করে প্রতিপক্ষের রক্তপাত ঘটানো হয়েছে। কাউকে মুজাস্‌সিমা (আছারী) আবার কাউকে জাবরিয়া (আশআরী) অপবাদ দিয়ে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে।

View more

মদীনা সনদ কি বর্তমান আধুনিক রাষ্ট্রে নাগরিকতার পক্ষে দলীল হিসেবে পেশ করা যথার্থ?

মদীনা সনদ বিশুদ্ধ বর্ণনায় প্রমাণিত কিনা তা নিয়ে মতভেদ আছে, তবে অধিক গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে এটা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত।
এক্ষেত্রে চুক্তিটা মুসলিমদের সাথে ইহুদীদের। ইহুদীরা জিম্মী। তারা রাষ্ট্রের পক্ষে লড়াই করবে। আর মুসলিমরা এর বিনিময়ে তাদেরকে রক্ষা করবে।
এর সাথে বর্তমানে লিবারেল নাগরিকতার মিল নেই।
তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো,
- আধুনিক গণতন্ত্রে কেউ যদি রাষ্ট্রদ্রোহিতা করে, তাহলে তাকে মৃত্যুদণ্ড কিংবা শাস্তি দেওয়া হবে। আর সেই শাস্তির মধ্যে দেশান্তর বলে কোনো শাস্তি নেই। অন্যদিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহুদীদেরকে দেশান্তর করেছিলেন। এতে করে বোঝা যায় যে মদীনার কানুনে তাদেরকে ‘আহলুয যিম্মাহ’ বলেই বিবেচনা করা হয়েছিল, প্রকৃত নাগরিক হিসেবে নয় যেমনটা আধুনিক গণতন্ত্রে নাগরিকদেরকে বিবেচনা করা হয়।
- আরো একটা প্রমাণ হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর আগে অমুসলিমদেরকে উপদ্বীপ থেকে বের করে দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন, আর আরব উপদ্বীপের মাঝে মদীনাও আছে। আধুনিক গণতন্ত্রের নাগরিকতা কনসেপ্টের ঘোর বিরোধী এটা। এতে প্রমাণিত হয় যে, ইসলামে নাগরিকতার ক্ষেত্রে জাতীয়তার চাইতে দ্বীনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
[আ.বা]

View more

আমরা কি এটা বললেই পারি না যে সিফাতের মাসআলায় মতভেদ ইজতিহাদী? সালাফের দুটো মত আছে, ইসবাত (সাব্যস্ত করা) এবং তাউইল (ব্যাখ্যা করা)? একদল আরেকদলকে ভুল বলার কী দরকার? উভয় দলেই তো ভালো মানুষেরা আছেন। সবারই উদ্দেশ্য ছিল রবকে সৃষ্টির সাদৃশ্য থেকে মুক্ত এমনটা প্রমাণ করা? সবাই-ই তো ইজতিহাদ করেছে!

না, বললেই পারি না।
কারণ বাস্তবতা এতটা রোমান্টিক না। সালাফের দুটি মত ছিল না। আর সব দল, মাযহাব কিংবা দ্বীনে সম্মানিত লোকেরা এবং ভালো মানুষেরা থাকলেই সেটা সঠিক হয়ে যায় না। প্রত্যেকেই তো রবকে মর্যাদা দেওয়ার জন্যই এমনটা করেছে, এ কথা বলে কোনো মাসআলাকে ইজতিহাদী প্রমাণ করা যায় না। একটা মাসআলা ওহীতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন্দ্রীয় সেটার আলোকে এটা ইজতিহাদী কিংবা গায়রে ইজতিহাদী বলা যায়। তাই কোনো মতকে ভুল বলা কিংবা বিদ‘আত ও পথভ্রষ্টতা হিসেবে অভিহিত করার অর্থ যুলুম করা না। বরং বাস্তবতা যেমন, তেমনিভাবে সেটাকে তুলে ধরা উচিত। ওহীর দিকে যথাযথভাবেই আহ্বান করতে হবে। এখানে আবেগের প্রশ্রয় নেই।
[উস্তায মাহের আমীর]

আধুনিকতা বা মডার্নিজমের সাথে ইসলামী রাষ্ট্রের অস্তিত্ব সাংঘর্ষিক হলে বর্তমানে কী করে ইসলামী শাসন বা খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব?

আপনি যদি খেলাফত রাষ্ট্রের কথা বোঝাতে চান যেটা সমগ্র উম্মাহকে ধারণ করবে এবং জিহাদুত তলবের মাধ্যমে অমুসলিমদের সাথে প্রতিক্রিয়া করবে, তাহলে বর্তমান আধুনিক আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে হবে। বর্তমান যে রাষ্ট্রব্যবস্থা, সেটা বিদ্যমান থাকলে খেলাফত হবে না, এটা স্বাভাবিক বোধগম্য বিষয়। কারণ খেলাফত তো কেবল আধুনিক জাতিসত্তা রাষ্ট্রের বিপরীতে না, বরং আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থারই বিরোধী। আর আপনি যদি আঞ্চলিকভাবে শরীয়াহ আইন প্রয়োগ এবং জাতীয়তাবাদকে ইসলামী রূপ দেওয়া বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে সেটার উদাহরণ হিসেবে ইরান আসতে পারে (যদিও আকীদাগত দিকে তারা বিভ্রান্ত), যেটাকে ইসলামী রূপ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটা নির্দিষ্ট কাঠামো দেওয়া হয়েছে। আরো উদাহরণ বলা যায় ইসরাইল, তবে সেটা কেবল জাতীয়তাবাদকে একটা ধর্মীয় কাঠামো দিয়েই ক্ষান্ত হয়েছে। আর এমনটা করতে হলে দুটি বিষয়ের প্রয়োজন: ১। সুন্নী সংখ্যাগরিষ্ঠ একটা দল যদি শরীয়তে বিশ্বাসী থাকে এবং তারা বিপুল গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে জনগণের সহায়তায় একটা বিপ্লব ঘটাতে পারে। ২। সে পরিমাণ শক্তিমত্তা ও ইচ্ছা থাকতে হবে, যেটার দ্বারা রাষ্ট্রকে বহির্বিশ্বের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব হবে। আবারও ইরানের উদাহরণ এসে পড়ে।
তবে হ্যাঁ, এখানে অনেকে ভেতর থেকে পরিবর্তনের পদ্ধতির কথা বলবেন যেমনটা তিউনিসে নাহদা চেষ্টা করেছে এবং বিভিন্ন দেশে ইসলামী দলগুলো চেষ্টা করছে। কিন্তু এদের ভবিষ্যত হলো আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় একীভূত হয়ে যাওয়া। আন্তর্জাতিক যে রাষ্ট্রব্যবস্থা, সেটার কারণে মডার্নিজম তথা আধুনিকতাকে মেনে নিতেই হবে। জাতীয়তাবাদ, ক্ষমতার উৎস নির্ধারণ, সামাজিক নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিষদের কর্তৃত্ব, সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রদান, নাগরিকত্বের অর্থ ও অধিকার, মানবাধিকার, নারী অধিকার ইত্যাদি সব কিছু বরণ করতে বাধ্য হতে হবে।

View more

Language: English